একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাস


শুক্রবার। নামায পড়ে বের হচ্ছি।লোক জনের ভিড়াভিড়ি।আমি বরাবরি শেষ কাতারের মুসল্লি।১০ নম্বর লেইন জামে মসজিদে জুমা পড়ি বেশির ভাগ।আগে কেন্দ্রীয় মসজিদে পড়তাম।যেখানেই পড়ি না কেনো দ্বিতীয় তলার শেষ কাতারেই আমার স্থা্ন।সবার শেষে যাই আবার সবার আগে বেরিয়ে আসি।কিন্তু কিছু দিন যাবৎ মসজিদে একটু আগেই চলে যাই।ধরুন অধ ঘণ্টা আগে । বের হতে আর আগের মতো তাড়াহুড় করি না্ এখন।এর মানে এ নয় যে,আমি নতুন ধার্মিক হয়ে ওঠছি।একুশ বর্ষার প্রায় ষোলটি ধর্মের ভেতর কেটেছে।তাই নতুন করে ধার্মিক হওয়ার কিছুই নেই।সিঁড়ি দিয়ে নামছি।৫২ কেজি ওজেনের মানুষ,চিকন-চাকন,হেংলা-পাতলা।কেউ আমার সাথে ধাক্কা খাচ্ছে না, আমি সবার সাথে ধাক্কা খাচ্ছি।হঠাৎ উল্ট ব্যাপার,পেছনে কে জানি আমার সাথে এসে ধাক্কা খেলো।বেশ অবাক হযে ঘুরে তাকালম।এই ব্যক্তি কে ??আমার সাথে ধাক্কা খেলো???ভাবলাম আমিও বুঝি আজকাল শহুরে মানুষ হয়ে যাচ্ছি।সুপার কিওয়ারিযিটি।ঘাড় ঘুরাতেই দেখলাম এক ক্ষীণ কায়া ব্যক্তি।বয়স্ক।বেশ তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি কেটে নামছে।গায়ে একটা ময়লা পাঞ্জাবী।আমি তাকে ফলো করতে শুরু করলাম।কিছু দূর নামতে মনে পড়লো জুতা ফেলে আসছি ওপরে।আবার জনতার ভিড় ভেদি সিঁড়ি বেয়ে ওঠতে লাগলাম।দ্রুত জুতা হাতে নিয়ে নেমে গেলাম নিচে।জুতা পরছি আর ঐ লোকটাকে খুঁজছি মনে মনে।কিন্তু তাকে চোখে পড়ছে না।এক কদম বাড়াতেই চোখে পড়লো জনতার ভিড়।কিছু মানুষ একটা বেনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কালো অক্ষরে লেখা মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ক্রিকেটার রুবেল আহত।আমি থমকে দাঁড়ায়।আবার পড়ি। না, আমাদের জাতীয় দলের কালো মানিক না।চিনি না ছেলেটাকে।পায়ে খুব জখম খেয়েছে।হাঁড় নাকি ভেঙে গেছে।সাহায্যের আবেদন চেয়ে কয়েক জন মানুষ বাকস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেইটের দু’পাশে ।রাস্তায় নেমে দাঁড়ালাম।বন্ধু সাইফুলের জন্য অপেক্ষা করছি।হঠাৎ মনে পড়লো,ওতো এখনে নেই। পতেঙ্গায় গেছে বেড়াতে।বাসায় চলে যাবো,পশ্চিম দিকে ঘুরতেই ঐ লোকটাকে দেখতে পেলাম।তার পাশে বসে আছে আরো দুটি রুগ্ন মহিলা।কেউ তাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না্।খেয়াল করলাম,মসজিদ থেকে বের হতেই সকলেরি চোখ ঐ বেনারের ওপর পড়ছে।কিন্তু চোখ আর নড়ছে না।বেনারের লেখা গুলো পড়তে পড়তে খুব ধীরে সবাই সামনের দিকে পা বাড়া,আশেপাশে কেউ তাকাচ্ছে না।লোকটি মানুষের কাছে হাত পেতে তার অক্ষমতার কথা বলছিলো বারবার, বোধ হয় যে ভাবে সে প্রতিদিন বলে।কিন্তু তার কণ্ঠ আর কারো কানে যায় না আজ।মসজিদের মানুষ যতোই কমছে তার চেহেরা ততই কলো বর্ণ হয়ে ওঠছে।প্রতি শুক্রবারে মসজিদের দর্জায় বসে বলে মহিলা গুলো অনেকটা আমার চেনা।তাদের সব কিছু আগের মতোই।শুধু আগের শুক্রবারের মতো মাটিতে বিছানো তাদের আঁচলে নেই ভাংতি এক টাকা দু’টাকার এলোমেল নোট।তিলক পড়া ময়লা পাঞ্জাবী গায়ে বৃদ্ধের হতেও নেই একটি পয়সা।হয়তো একটি দীর্ঘ নিঃশ্বাসই তাদের আজকের সম্বল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট‬