কবি-টবি


অনেক দিন ধরে একটা বিষয় নিয়ে লিখবো ভাবছি।কিন্তু বিষয়টা্ যতোটা না জটিল তার চেয়ে উপস্থাপন করাটা বেশি জটিল মনে হচ্ছে।কারণ ময়-মুরব্বির অভাব নেই। এই পোস্টি সবার কাজে আসবে না।এ ক্ষেত্রে যে বামুন শূদ্রের পার্থক্য বিদ্যমান।কেউ কেউ আছেন পোস্টিটির আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে জানা মাত্রই মনে মনে আমাকে একটু ঝেড়ে দেবেন।হয়তো বলবেন,পোস্ট দেয়ার জন্য তুই বুঝি আর বিষয় পায়লি না।আসলে পোস্ট দেয়ার মতো বিষয়ের কোনো সংকট নেই।আমি যদি আমাদের বাসার দারোয়ান সম্পর্কে লিখতে বসি হয়তো ছোট খাটো একটা উপন্যাস হয়ে যাবে।ধরুন আমি লিখলাম,কিভাবে সে সহজ কাজটা জটিল করে তোলে, দোকান থেকে সদায় আনতে দিলে কিভাবে ওস্টো খেয়ে হাত পা ছিঁড়ে পেলে, বিভিন্ন প্লেটে কাজ করতে আসা বুয়াদের সাথে কেমন করে রসিকতা করে,কিভাবে আমি তার রোষানলে পড়ি,আমার সাথে তার স্নায়ুবিক যুদ্ধের বর্তমান হালচাল,তার রোষানলে পড়ে আজকে আমার কী অবস্থা ইত্যাদি ইত্যাদি ।
আসলে বলতে চাচ্ছি কবি ও কবিতা নিয়ে।যাদের ভেতর কবি-টবি ভাব আছে হয়তো তারা একটু পড়ে দেখবেন।এই বিষয়ে যে আমি খুব ভালো জানি তা না।কবিতা লেখার জন্য নাহোক অন্তত পড়ার জন্য যা প্রয়োজন তা সম্পর্কে কিন্তু মোটামুটি জ্ঞাত আছি।বোধ হয় রবি ঠাকুর বলে ছিলেন,‘মানুষ মাত্রই কবি’।জীবনানন্দ কিন্তু তার ঘো্র বিরোধী ছিলেন।তিনি একদিন এক সভায় বলে ছিলেন কবি আছে মাত্র হাতে গোনা কয়েক জন।অথচ সে আমলে কবির অভাব ছিলো না।বেশ বড় বড় অনেক কবিরা সে মজলিশে উপস্থিত ছিলেন।একজন তো তাকে জিজ্ঞাসই করে বসলেন,হাতে গোনা কারা কারা একটু বলুন তো? অবাক করা কাণ্ড হলো,জীবনানন্দ তার প্রশ্ন শুনে তাদের নাম বলতে শুরু করেন।এতে তার সামনে উপস্থিত থাকা কিছু কবি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন।
কিন্তু ইতিহাসের কি অবাক কাণ্ড,জীবনানন্দ যাদের নাম বলে ছিলেন তারা ছাড়া এখন বাকিদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে গেছে প্রায় অথবা ইতিহাস তাদেরকে বের করে দিয়েছে পাতা থেকে।বর্তমান সময়ের বেশ কিছু ব্যক্তি আছেন যাদেরকে আমি একজন সচেতন পাঠক হিসেবে কখনোই কবি বলতে পারি না।কবিতা লিখতে লিখতে একদিন ভালো কবি হওয়া যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।কাথায় আছে না,বলতে বলতে বক্তা।অর্থাৎ চেষ্টা অবিরাম করে যেতে হবে।কিন্তু চেষ্টার একটা কাঠমো থাকা উচিৎ।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো লিখতে হলে পড়তে হবে।কারণ আপনার পাতিলে যদি ভাত না থাকে পাতিলে হাত দিলে আপনি কিছুই পাবেন না?আমাদের সমস্যাটা হলো আমরা পড়তে চাই না।আমাদের অবস্থাটা হলো আজকে আম গাছ লাগাইলাম,কাল যেনো সে গাছে আম ধরে পেকে থাকে।এটা কি আদৌ সম্ভব!এই গাছটাকে দীর্ঘ দিন চর্চা করতে হবে।পানি দিতে হবে,আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।কতো কষ্ট করতে হয় একটা গাছে ফল ধরাতে হলে।তাই তো হেলাল হাফিজ বলেছেন,‘কবির কষ্ট দিয়ে কবিতা পুষ্ট হয়’।কিন্তু বর্তমান লোক/কবিরা কষ্ট করতে রাজি নন।তাহলে তাদের কবিতা পুষ্ট হয় কেমন করে?
একদিন এক বন্ধু আমাকে বলে ছিলো তার একটা কবিতা কোন একটা দৈনিকে নাকি ছাপিয়েছে।জিজ্ঞেস করলাম তুমি কোন ছন্দে লিখেছো? সে আমায় উত্তর দিলো,“ছন্দ তো আমরা তৈরি করি”।অসাধারণ।বললাম পত্রিকায় তোমার কোনো পরিচিত জন কাজ করে নাকি?সে আমার দিকে একটু অবাক হয়ে তাকালো।বললো,আছে তো এক বড় ভাই।আমি বললাম ওওও।সে যদি হাতুড়ে কবি হয়ে ওঠে এর দায়ভার কিন্তু ঐ পত্রিকা নেবে না।আর ছেলেটা ভাববে ছন্দ ছাড়া যদি কবিতা পাবলিস্ট হয় তবে ছন্দের কি দরকার।তার যুক্তি কিন্তু খারাপ না।খারাপ হলো পত্রিকায় কাজ করা তার বড় ভাইটা।এখনকার যুগে আপনি যদি সাহিত্য কাঁপানো কবিতাও লিখে পত্রিকায় পাঠান,লিংকের অভাবে তা পাবলিস্ট হবে না।লিংক দিয়ে যেমন বাংলাদেশের সরকারী চাকরি পাওয়া যায়,ঠিক লিংক দিয়ে বাংলাদেশের পত্রিকায়ও স্থান পাওয়া যায়।তবে মনে রাখবেন ইতিহাস বলে একটা শব্দ আছে।যার হাতে রয়েছে প্রচণ্ড ক্ষমতা।এখানে শুধু অভিজাত শ্রেণি সসম্মান টিকে থাকে,বাকিদের স্থান কিন্তু এখানে হয় না।তাদের স্থান হয় ইতিহাসের ডাস্টবিনে।
এক ব্যক্তি তার লিখা একটা ফিচার পোস্ট করেছে ফেইসবুক পাতায়,আমি কমেন্ট করে জিজ্ঞেস করলাম ফিচারের অাবশ্যক কয়টি বৈশিষ্ট্য আছে।তিনি আমাকে বললেন,“হাতে কলম থাকলে বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন নেই”।আমি রিপ্লাই দিয়েছি, হাতে কলম না, হাতে বড় ভাই-টাই থাকলে বৈশিষ্ট্য-টৈশিষ্ট্য লাগে না।তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে ব্লক করে দিলেন।অনেক বন্ধু আছে আমাকে তাদের কবিতা পাঠায় একটু দেখার জন্য।আমি তাদের কোনো দিনো কিছু বলি না।বেশি চাপাচাপি করলে বলি ভাই আমার জানার পরিধি খুবি সীমিত।তোমরা কবিতা ভালো বোঝে এমন কোনো ব্যক্তিকে দেখাও।তিনি তোমাদের সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন।চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র তার লিখা একটা কবিতা আমাকে দিয়ে ছিলো দেখার জন্য।আমি সোজা ইহতেশাম স্যারকে দেখিয়ে এসছি।ভয় কাজ করলে হবে না।বড়রা তোমাদের কি ভুলের জন্য মেরে পেলবে, নাকি লজ্জা লাগে? জেনে রাখবে,জ্ঞানের বড় শত্রু হলো লজ্জা ও অলসতা।শেখার ক্ষেত্রে বড় ছোট বলে কোনো কথা নেই।যেখান থেকে পারো কুড়িয়ে নাও।শেষ কথা হলো পুষ্ট কবিতা লিখার জন্য কষ্ট করতে হবে।ছন্দ জানতে হবে।শব্দের উৎকৃষ্ট প্রয়োগ জানতে হবে।বানান টানান ঠিক করতে হবে।অলংকার,অনুপ্রাস সম্পর্কে গভীর ধারনা তৈরি করতে হবে।এসব যদি করতে না পারো তবে পত্রিকার পাতায় ঠাঁই হলেও ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই মিলবে না।কবিতার মতো কবিতা এক লাইন হলে যথেষ্ট।যেমন হেলাল হাফিজের সেই বিখ্যাত কবিতাটি,
নিউট্রন বোমা বোঝ,মানুষ বোঝ না?
কবিতা লিখো লিখতে থাকো।গদ্য ছন্দেরও একটা ছন্দ আছে কিন্তু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান

স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট‬